ভূতুরে বিদ্যালয়ে নেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উপস্থিতি, শ্রেনী কক্ষে ঝুলছে তালা

বাংলার সকাল ডেস্কবাংলার সকাল ডেস্ক
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১০:০৯ PM, ১৩ জুন ২০২৩

 

ওবায়দুল ইসলাম রবি: রাজশাহী চারঘাট উপজেলায় ভূতুরে বিদ্যালয়ে নেই শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের উপস্থিতি। স্থানীয়রা হতবাক বর্তমান এই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থপনায়। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের জয়পুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামের একটি এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমন দুদর্শায় হতবাক শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। এ গুলো দেখে ওই এলাকার সাধারন মানুষ আজ ক্ষুব্ধ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাবাসী।

সোমবার সকাল ১০ টা পেরিয়ে গেলেও শিক্ষক, শিক্ষার্থী কারোরই দেখা মিলেনি। প্রতিটি ক্লাস রুমে ঝুলছে তালা। কিছু সময় অতিবাহিত হবার পরে দেখা মিললো দুজন শিক্ষকের। কথা বলার এক পর্যায়ে ওই শিক্ষকের মধ্যে থেকে একজন ফোন দিয়ে বসলেন স্যার তাড়াতাড়ি বিদ্যালয়ে আসেন। খবর পেয়ে ১০.৩৫টার সময় আসলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তিনজন শিক্ষক ছাড়া আর কেউ নেই। এরই মাঝে ২জন শিক্ষার্থীর দেখা মিলছে সাংবাদিকদেরও সাথে। পরিশেষে মোবাইল ফোনে ডেকে আনা হলো অফিস সহকারীকে।

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের জয়পুর এলাকার ক্ষিার্থীদের কথা বিবেচনা করে ১৯৯৫ সালে জয়পুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। এরপর ২০০৪ সালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্ত হলেও বিদ্যালয়টিতে কাংখিত শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক কর্মচারী নেই। সঠিক সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি খোলা ও বন্ধ করা হয়না। এমনকি বিদ্যালয়টিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলনও হয়না সঠিক নিয়মে। বিদ্যালয়টিতে নেই সাইন বোর্ড। বিদ্যালয়টির অবকাঠামো দেখে বোজার উপায় নেই এটি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কয়েকটি ক্লাস রুমে তালা ঝুললেও একটি ক্লাস রুমের দরজা ভাঙ্গা । আবার আরেকটি ক্লাসের নেই দরজা। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি শুধু নামেই পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে। প্রতিষ্ঠানটির এমন করুন দুদর্শায় হতবাক শিক্ষা সশ্লিস্টরা। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। দীর্ঘদিন ধরে এমন ভুতরে অবস্থা বিরাজ করলেও দেখার যেন কেউ নেই। অভিযোগ উঠেছে শিক্ষার্থী না থাকলেও বেতন ভাতা ঠিকই নিচ্ছেন শিক্ষকরা। এরই মধ্যে নিয়োগ দিয়েছেন নৈশ প্রহরী ও পরিছন্নতা কর্মী। শিক্ষার্থীরা না থাকলেও কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে লাভ কি? প্রশ্ন এলাকাবাসী।

এবিষয়ে জরুরী ভিত্তিতে প্রয়্জোনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষে ওই এলাকার আব্দুল হাদী নামের এক ব্যাক্তি জেলা প্রশাসক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরিচালক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চারঘাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, স্থানীয় জয়পুর বাজারে গেলে ওই এলাকার বাসিন্দা মিলন আলী, আখতার আলী,হোটেল ব্যবসায়ী মিন্টুসহ একাধিক ব্যাক্তি বলেন, এখানকার শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে গেলেও কেন কমলো এ বিষয়ে খোজ নেন না। তাদের ধারনা শিক্ষার্থী থাকুক আর না থাকুক এমপিও হয়ে গেছে বেতন ভাতা তো পাচ্ছি। শিক্ষকদের এমন আচারনের কারণে শিক্ষার্থী আজ নেইর । তাছাড়া অভিভাবকর আর এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী দিতে চাই না। বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাদেকুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সালে একজন সহকারী শিক্ষক এবং ২০২১ সালে প্রধান শিক্ষক আফরোজা সরকার মারা যাওয়া বর্তমানে শিক্ষক সংকট। ফলে অভিবাবকরা শিক্ষার্থীরা দেয় না। শিক্ষক না থাকার কারনেই এমনটা হয়েছে দাবি করেন তিনি।

মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি চারঘাট উপজেলা শাখার সভাপতি ইমদাদুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শিক্ষার্থী না থাকার কারন অনুসন্ধানে হলিদাগাছী, ইউসুফপুর, নাওদাড়াসহ আশে পাশের কয়েকটি স্কুল প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে জয়পুর এলাকাবাসীর সঙ্গে মত বিনিময় করা হয়েছে। সেখানকার অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের জামিরা ও জাফরপুর বিদ্যালয়ে পাঠান। যে কারনে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নেই। তবে এ বিষয়ে আবারও ওই এলাকায় বসে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ গ্রহন করা হবে। তবে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চেষ্টা করছেন শিক্ষার্থীদের কিভাবে বিদ্যালয় মুখি করা যায়। বিদ্যালয়ে কাংখিত শিক্ষার্থী না থাকা, সঠিক সময়ে পতাকা উত্তোলন না হওয়া, শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে সঠিক সময়ে উপস্থিত না হওয়া, সাইন বোর্ড না থাকাসহ বিভিন্ন অনিয়ম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবই হয়। কিন্তু একটু দেরিতে। তবে এ বিষয়ে সংবাদ না করার অনুরোধ করেন তিনি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সোহেল রানা অভিযোগ পাওয়াা বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমরা তদন্ত করছি। অভিযোগ প্রমানিত হলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষা বিষয়ে কোন ধরণের ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে বিষয়টির ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষা বিষয়ে কারো কোন ধরণের অনিয়ম সহ্য করা হবে না।

আপনার মতামত লিখুন :