সড়কে প্রতিদিন গড়ে ৬৪ মৃত্যু: যাত্রী কল্যাণ সমিতি

বাংলার সকাল ডেস্কবাংলার সকাল ডেস্ক
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১২:১৯ PM, ২২ অক্টোবর ২০২২

বাংলার সকাল ডেস্কঃ দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু হয় ৬৪ জনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিধান দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

একই সঙ্গে সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল সক্রিয় করার দাবিও জানিয়েছে তারা। এদিকে, দুর্ঘটনা রোধে গাড়িচালকদের পাশাপাশি যাত্রীদেরও সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়েছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ।

কেউ হারিয়েছেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে; কেউবা হারিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একমাত্র ছেলেকে। অন্যদিকে, বাবাকে হারিয়ে কী কষ্টে জীবনযাপন করতে হচ্ছে, সেই গল্পই উঠে এসেছে ছেলের মুখে। শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় যাত্রী কল্যাণ সমিতির সংবাদ সম্মেলনে এসে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বজন হারানোর যন্ত্রণার কথা বললেন তারা।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হয়েছে, দেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ৬৪ জনের; সে হিসাবে বছরে প্রাণহানির সংখ্যা ২৩ হাজার ৩৬০। বছরে আহত ৩ লাখের মধ্যে প্রতিবন্ধী জীবনযাপন করে কমপক্ষে ৮০ হাজার মানুষ।

বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের হিসাবে, গত এক দশকে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ৫৪ শতাংশের বয়স ১৬ থেকে ৪০ বয়সের মধ্যে। যাদের বেশিরভাগই কর্মক্ষম জনবল।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দেশের কর্মক্ষম ব্যক্তিরাই সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন। এর প্রভাব পড়ছে জাতীয় অর্থনীতিতে। দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তি এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।

এদিকে, গাড়িচালক, মালিক ও যাত্রীরা সচেতন না হলে সড়ক পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে না, বলছেন বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার।

শুক্রবার বনানীতে বিআরটিএর কার্যালয়ে নিরাপদ সড়ক দিবসের অনুষ্ঠান তিনি আরও জানান, এ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে নেয়া হয়েছে বিশেষ কর্মসূচি।

দুর্ঘটনার রাশ টানতে সড়ক আইন হওয়ার চার বছরেও শৃঙ্খলা ফেরেনি সড়কে। বরং দুর্ঘটনা বেড়েছে অন্তত ২৫ শতাংশ। এমনটাই বলছে বুয়েটের পরিসংখ্যান। বিধিামালা বাস্তবায়নে সমন্বয়হীনতাকেই এজন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর বিআরটিএ বলছে, দুর্ঘটনা কমাতে তদারকি বাড়ানো হয়েছে, তবে প্রয়োজন সচেতনতা।

সড়কে এমন চিত্র যেন নিত্যদিনের। রাজধানী ছাড়া্ও দেশের কোথাও না কোথাও প্রায় প্রতিদিনই ঝরছে প্রাণ। কেউ কেউ বেঁচে ফিরলেও বরণ করতে হচ্ছে পঙ্গুত্ব।

দুর্ঘটনার লাগাম টানতে ২০১৮ সালে সড়ক আইন করা হয়। এর ফলে দুর্ঘটনা যেখানে কমার কথা, সেখানে বেড়েছে অন্তত ২৫ শতাংশ। এমন তথ্য দিচ্ছে বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্স ইন্সটিটিউট। অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের দাপট, ফিটনেসবিহীন পরিবহনের দৌরাত্ম্য এবং সড়ক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ না থাকায় দুর্ঘটনায় লাগাম টানা যাচ্ছে না কিছুতেই।

পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, ৯০ দশমিক ৬৯ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী অদক্ষ চালক। সারা দেশে নিবন্ধনবিহীন চালকের সংখ্যা ২৪ লাখ বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। তাদের বেপরোয়া গতি ও ট্রাফিক আইন না মানায় সড়কে শৃঙক্ষলা ফিরছে না বলে মত নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের নেতাদের।

এদিকে লাগামহীন দুর্ঘটনার জন্য মোটর সাইকেল এবং থ্রি হুইলারকে দুষছে বিআরটিএ। নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সমন্বিত উদ্যোগের কথা বলছেন সংস্থাটি।

সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমিয়ে আনতে নিরাপদ সড়ক বিধিমালা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি সংশ্লিষ্টদের।

আপনার মতামত লিখুন :