জ্বালানি খাতে ভুল উন্নয়নের খেসারত

বাংলার সকাল ডেস্কবাংলার সকাল ডেস্ক
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৭:৪৫ PM, ১৪ জুলাই ২০২২

বাংলার সকাল ডেস্কঃ ঘন লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত দেশের আবাসিক ও শিল্প খাত। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও এলএনজির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় খরচ সাশ্রয়ের জন্য পরিকল্পিতভাবেই এ লোডশেডিং করতে হচ্ছে। সরকার সবাইকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সেই সঙ্গে ৭ জুলাই থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সারাদেশে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার, শপিংমল, দোকানপাট, অফিস ও বাসাবাড়িতে আলোকসজ্জার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পরিহাসের বিষয়, গত মার্চ মাসে দেশব্যাপী শতভাগ বিদ্যুতায়ন উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন দপ্তর, সংস্থা, কোম্পানি বা স্থাপনাগুলোয় আলোকসজ্জা করার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল!
বস্তুত বর্তমান সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি যে খাতে উন্নয়নের প্রচারণা চালানো হয়েছে, সেটি হলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা যে প্রক্রিয়ায় বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং তার জন্য প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহের যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, তার কারণেই আজকে লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট হলেও প্রাথমিক জ্বালানির অভাবে সব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো যাচ্ছে না। ফলে ১২ বা ১৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। অথচ বসিয়ে রাখা উৎপাদন ক্ষমতার জন্য দেশি-বিদেশি বেসরকারি মালিকদের ক্যাপাসিটি চার্জ বা ভাড়া ঠিকই দিতে হচ্ছে।
স্থানীয় উৎসের প্রাথমিক জ্বালানির ওপর গুরুত্ব না দিয়ে এলএনজি, তেল ও কয়লার মতো আমদানিনির্ভর প্রাথমিক জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। এখন যেহেতু বিশ্ববাজারে সেসব প্রাথমিক জ্বালানির দাম বেড়ে গেছে, তাই সেসব জ্বালানি আর আগের মতো আমদানি করা যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
এলএনজি আমদানির কথাই ধরা যাক। সরকারের পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যানেই তো এলএনজি আমদানি দিনে দিনে বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল। তাহলে এখন কেন এলএনজির বেশি দাম বলে আমদানি বন্ধ রাখা হচ্ছে? এলএনজির দাম সব সময় কম থাকবে- এ রকম নিশ্চয়তা সরকার কোথায় পেয়েছিল? সরকারের পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান ২০১৬-তে বলা হয়েছিল, ২০১৯ সালে এলএনজির মাধ্যমে গ্যাসের চাহিদার ১৭ শতাংশ পূরণ করা হবে। এর পর এলএনজি আমদানি বাড়িয়ে ২০২৩ সাল নাগাদ গ্যাসের চাহিদার ৪০ শতাংশ, ২০২৮ সাল নাগাদ ৫০ শতাংশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ গ্যাসের চাহিদার ৭০ শতাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করা এলএনজি দিয়ে পূরণ করা হবে। জ্বালানি পরিকল্পনা করা হবে এলএনজি আমদানিকে কেন্দ্র করে। তারপর যখন এলএনজির দাম বাড়বে তখন হুট করে এলএনজি আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হবে- এটা তো কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনার নমুনা হতে পারে না। উচিত ছিল এলএনজি আমদানি আর তেল ও কয়লানির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের পেছনে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচের বদলে সেই টাকা দেশীয় গ্যাস উত্তোলনে সক্ষমতা বৃদ্ধির পেছনে ব্যয় করা; দেশীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে ভারতের ওএনজিসির মতো দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র অধিগ্রহণ করে সস্তায় গ্যাস আহরণে সক্ষম করা।
লক্ষণীয়, বাপেক্সকে ভারতের ওএনজিসির মতো সক্ষম করার কথা কিন্তু জাইকার তৈরি পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যানেও বলা হয়েছিল- ‘প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত একদিন শেষ হয়ে যাবে। বাপেক্সের ভূমিকা পরিবর্তন করে একে দেশের বাইরের জ্বালানিসম্পদ

আপনার মতামত লিখুন :