গৌরবময় সেবার ৩০ বছরে পদার্পণ করলো রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ

বাংলার সকাল ডেস্কবাংলার সকাল ডেস্ক
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১১:৩০ AM, ০১ জুলাই ২০২২

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ আজ ১ জুলাই রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ৩০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ‘শৃঙ্খলা সেবা নিরাপত্তা মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে গৌরবময় সেবার ২৯ বছর পেরিয়ে ৩০ তম বছরে পদার্পণ করল আরএমপি । বর্ণাঢ্য র‌্যালি-সহ নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে উদযাপিত হলো আরএমপি’র ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ শুক্রবার ১ জুলাই বেলা ১১ টায় আরএমপি’র ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নগরীর ভেড়িপাড়া মোড়ে বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করে। র‌্যালিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার), ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ মহোদয়। র‌্যালিটি ভেড়িপাড়া মোড় হতে শুরু হয়ে পুলিশ লাইন এ এসে শেষ হয়। র‌্যালিতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়ির পুলিশ সদস্য-সহ আরএমপি পুলিশের ব্যান্ড দল অংশ গ্রহন করে। র‌্যালি শুরুর পূর্বে প্রধান অতিথি মহোদয় বেলুন ফেস্টুন ও কবুতর অবমুক্তকরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। সাথে ছিলে আরএমপি পুলিশ কমিশনার জনাব মো: আবু কালাম সিদ্দিক মহোদয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে র‌্যালি শেষে প্রধান অতিথি মহোদয় পুলিশ লাইনস্ েবিশেষ রক্তদান কর্মসূচি, অনাবাদী জমিতে সবজি চাষের উদ্বোধন, বৃক্ষরোপণ এবং মৎস্যপোনা অবমুক্তকরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

উক্ত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন জনাব আবু হাসান মোহম্মদ তারিক, বিপিএম, প্রিন্সিপাল (এ্যাডিশনাল আইজি), বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী, সারদা, রাজশাহী, জনাব মো: আব্দুল বাতেন, বিপিএম, পিপিএম, ডিআইজি, রাজশাহী রেঞ্জ, আরএমপি ও রাজশাহী রেঞ্জ এবং বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার-সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।

আরএমপি রাজশাহীর জননিরাপত্তা বিধান ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে আসছে ৩০ বছর ধরে। বাংলাদেশ পুলিশের ইউনিট আরএমপি ১৯৯২ সালের ১লা জুলাই ৪টি থানা ও ১০টি ফাঁড়ি নিয়ে গঠিত হয় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ ।এরপর থেকে জনবহুল রাজশাহী মহানগরের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা এবং অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে নিরলসভাবে কাজ করছে আরএমপি ।৭৮ বর্গ কলোমিটার এলাকার আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে জনবল ও অবকাঠামো উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে ২০১৮ সালে ৪টি থানার স্থালে ১২টি থানায় রুপান্তর করা হয়। ১২ টি থানা এলাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৮ বর্গ কিলোমিটার থেকে ৪৭২ বর্গ কিলোমিটার। প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং পেশাগত জ্ঞান অর্জনকে প্রাধান্য দিয়ে, সৃজনশীলতা এবং জনঅংশীদারিত্বকে অন্যতম কার্যকৌশল হিসেবে গ্রহণ করে বহুমাত্রিক এ নগরের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা বিধানে সচেষ্ট রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ। পুলিশী জনবল ও থানা বৃদ্ধির কারণে ক্রমান্বয়ে রাজশাহী মহানগরীর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনুকূলে চলে আসে। শান্তির নগরীর রাজশাহী হয়ে উঠে আরও শান্তিময়।

২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী ভয়াল মহামারী কোভিড ১৯ বা করোনা ভাইরাস মহামারী রুপ নিলে রাজশাহী শোচনীয় পরিস্থিতির শিকার হয়। তখন সরকারী বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ বেশ কিছু জন সেবা মূলক পদক্ষেপ নিয়ে করোনা রোগীদের পাশে দাঁড়ায়। যা রাজশাহীবাসীকে উদ্বেলিত করেছে। উজ্জ্বল করেছে পুলিশের ভাবমূর্তি।

করোনাকালে আরএমপির পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকের সময়োপযোগী মানবিক পদক্ষেপ বিশেষত আরএমপি’র পুলিশ কোভিড অক্সিজেন ব্যাংক বাড়ী বাড়ী অক্সিজেন সেবা দেয়া হয়। সকলে যেন নায্য মূল্যে অক্সিজেন ক্রয় করতে পারে সে জন্য নায্য মূল্যে অক্সিজেন বিক্রয়ের চুক্তির উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। নগরবাসীর মাঝে প্রায় দেড় লক্ষ মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেছেন। লকডাউন পরিস্থিতিতে মানবিক সংকটে পড়া অসহায়, দুঃস্থ, প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠি সহ বিভিন্ন নিম্ন আয়ের পেশাজিবী প্রায় ১১ হাজার পরিবারের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন। শুধু শহরেই নয় প্রত্যন্ত চরাঞ্চল চরমাজারদিয়াড়েও নিজে উপস্থিত থেকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি চরবাসীর যোগাযোগের জন্য রাস্তা তৈরি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। একই সাথে নগর জুড়ে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন, রাজশাহী নগরীতে অপরাধ প্রবণতা কমাতে নগরজুড়ে ৫০০ ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন করেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছিলেন নগরবাসী। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক জানান বলেন, অপরাধপ্রবণতা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।বর্তমানে রাজশাহী নগর বাসী এর সুফল ভোগকরছে। নগরজুড়ে ৫০০ ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন এর সুবাদে নগরীর বিভিন্ন হত্যাকান্ডের আসামী ,ছিনতাইকারী সনাক্তও গ্রেফতারে করা সম্ভব হচ্ছে।

২০২০ সালে ২৭ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) সাইবার ক্রাইম ইউনিট। রাজশাহী মহানগরে যাতে কোনো ধরনের সাইবার ক্রাইম সংঘটিত না হয় এবং কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করার লক্ষ্যে আধুনিক যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে পুলিশের স্বতন্ত্র এই ইউনিট কাজ শুরু করে। সাইবার ইউনিটের সাহায্যে গত এক বছরে বিভিন্ন ধরণের প্রমাণহীন তিন শতাধিক অপরাধের রহস্য উদঘাটনের মাধ্যমে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ড রয়েছে। আরএমপির সাইবার ইউটিনের অপারেশানাল এক্সপার্ট এসিপি উৎপল কুমার চৌধুরী বাংলার সকালকে বলেন, আরএমপির সাইবার ইউনিটের সাহায্যে এ পর্যন্ত নগরীর বাসাবাড়ি ও সড়কে মোটরসাইকেল চুরির শতাধিক ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও অপরাধীকে শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ৩০টির বেশি ছিনতাই ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এর ফলে নগরীতে অপরাধীদের দৌরাত্ম কমেছে।

 

কিশোর অপরাধীদের ডাটাবেজ তৈরীর কারণে অপরাধীদের কর্মকান্ড প্রায় নিয়ন্ত্রনে চলে আসে।‘রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) এলাকায় কিশোর অপরাধ দমনে তৈরি করা হয় কিশোর গ্যাং ডিজিটাল ডাটাবেজ। ইতোমধ্যে প্রায় ৪০০ কিশোরের বিস্তারিত তথ্য ডিজিটাল ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিশোর অপরাধের সাথে জড়িত কিশোরদের বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, অভিভাবকের নাম, প্রাতিষ্ঠানিক ঠিকানা, সম্ভাব্য চলাচলের এলাকা, মোবাইল নম্বর, ছবিসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত স্থানীয় থানা পুলিশের মাধ্যমে সংগ্রহ করে এই ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, অপরাধে জড়িয়ে পড়া কিশোরদের সংশোধন করতে চাই আমরা। এরা যেন রাষ্ট্রের আইন সম্পর্কে সচেতন হয়। এর সঙ্গে মানবিকতা ও মূল্যবোধ যদি জাগ্রত করে দেয়া যায়, তাহলে অপরাধ অনেকাংশে কমে যাবে।

রাজশাহী নগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক বলেন ,বর্তমানে ভাড়া বাড়িতে আরএমপি’র ১২টি থানার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আরএমপি’র ১২টি থানার মধ্যে সরকারী জায়গায় স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। বাকি থানা গুলো যেন নিজস্ব ভবনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে সে চেষ্টায় চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রাজার বাগ পুলিশ লাইনে সম্মুখ যুদ্ধ চালানো হয়। সেই সময়ের শহীদ হওয়া পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের স্মরণে রাজশাহী পুলিশ লাইস্ এ গড়ে তোলা হচ্ছে পুলিশ স্মৃতি মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর গড়ে তোলা হচ্ছে। রাজশাহী নগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক এর উদ্যোগে এই যাদুঘরটি নির্মান কাজ প্রায় শেষ পর্যয়ে। স্থানীয় দাতাদের সহোযগিতায় পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মান হচ্ছে । রাজশাহী নগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক জানান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের নির্দেশনায় পুলিশের ইতিহাস সংরক্ষনের জন্য এই যাদুঘর নির্মান করা হচ্ছে। এই যাদুঘরের মাধ্যমে ভবিষৎ প্রজন্ম স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশের অবদান জানতে পারবে।শহীদ পরিবারগুলোর সাথে যোগাযোগ করে তাদের স্মৃতি সংগ্রহ করছি।

সব মিলিয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ ত্রিশ বছরে কাঙ্খিত সুফল দিতে সক্ষম প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে এই পুলিশী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানটি।

আপনার মতামত লিখুন :