ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণে দুই বছর দেরি হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

বাংলার সকাল ডেস্কবাংলার সকাল ডেস্ক
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১০:৩৭ AM, ৩০ জুন ২০২২

ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে দুই বছর দেরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রের কারণে আমাদের সেতু নির্মাণ দুই বছর বিলম্বিত হয়েছে, কিন্তু আমরা হতোদ্যম হইনি। শেষ পর্যন্ত অন্ধকার ভেদ করে আমরা আলোর মুখ দেখেছি। দেশি-বিদেশি সব ষড়যন্ত্র এবং বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে পদ্মা সেতুর স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ পেয়েছে। বুধবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মেরিনা জাহানের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বুধবারের প্রশ্ন উত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়। এ সময় অধিবেশনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সেতুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহসিকতা, সহনশীলতা এবং আমাদের প্রত্যয়। আমরা এ সেতু করবোই, সেই জেদ। শেষ পর্যন্ত অন্ধকার ভেদ করে আমরা আলোর মুখ দেখেছি। পদ্মার বুকে জ¦লে উঠেছে লাল, নীল, সবুজ, সোনালি আলোর ঝলকানি। ৪২টি স্তম্ভ যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, পারেনি। আমরা বিজয়ী হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়া পয়েন্টে আনুষ্ঠানিকভাবে আমি পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। তারা জাপান সরকারকে পুনরায় মানিকগঞ্জের আরিচা প্রান্তে পদ্মা সেতুর জন্য সমীক্ষা করতে বলে। দ্বিতীয়বার সমীক্ষার পর জাপান মাওয়া প্রান্তকেই নির্দিষ্ট করে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রতিবেদন পেশ করে। ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সেতুর বিস্তারিত ডিজাইন প্রণয়নের লক্ষ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই হয় এবং প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজে বিস্তারিত ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়। ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন প্র্যাংক (এডিবি), জাইকা ও ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সঙ্গে ঋণ চুক্তি সই হয়। ঠিকাদার নিয়োগে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হলে ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজের নির্মাণ কাজ তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা এবং আইডিবি ঋণচুক্তি স্থগিত করে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে কানাডার টরেন্টোর একটি আদালতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে পুনরায় ফিরে আসার ঘোষণা দিলেও দেশ ও জনগণের স্বার্থে বিশ্বব্যাংকের ঋণ গ্রহণ না করে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। বহু কাক্ষিত পদ্মা সেতু প্রকল্পের সূচনালগ্নে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, চ্যালেঞ্জগুলোর উত্তরণ এবং হার না মানা সুদৃঢ় মনোবলের মাধ্যমে সব প্রতিকূলতাকে জয় করে এ সেতু আজ স্বপ্ন নয়, একটি দৃশ্যমান বাস্তবতা। শেখ হাসিনা বলেন, এতে কোটি কোটি দেশবাসীর সঙ্গে আমিও আনন্দিত, গর্বিত এবং উদ্বেলিত। অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আর ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রমত্তা পদ্মার বুকে আজ বহু-কাক্সিক্ষত সেতু দাঁড়িয়ে গেছে। এ সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-লোহা-কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয় এ সেতু আমাদের অহঙ্কার, আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা আর মর্যাদার প্রতীক। এ সেতু বাংলাদেশের জনগণের। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের রেল যোগাযোগ সৃষ্টি, ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ, কৃষি, ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্প, ক্ষুদ্রশিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, জাতীয় ও আঞ্চলিক অর্থনীতির বিস্তৃত ক্ষেত্রেও প্রভাব সৃষ্টিসহ দেশের বিভক্ত দেশের দু’টি অঞ্চলকে একীভূত করে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক এবং সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে।
নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে: এদিকে ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে সংসদ অধিবেশনে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে নিত্যপণের মূল্য স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে বলেও জানান তিনি। বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিরোধী দলের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেনের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা জানান। এ দিন প্রশ্নোত্তর পর্ব টেবিলে উপস্থাপিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনা ভাইরাস অতিমারির কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যসামগ্রীর উৎপাদন ও সরবরাহ হ্রাস পায়। উপরন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। যুদ্ধের কারণে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার অবনতি ঘটে বিধায় সমগ্র বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি দেখা দেয় এবং নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বাংলাদেশে দ্রব্যসামগ্রীর উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সরবরাহ অব্যাহত রাখা সম্ভব হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মে ২০২২ মাসে বৃটেনে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৯%, যুক্তরাষ্ট্রে ৮%, ভারতে ৭.৯% এবং তুরস্কে ৫৪.৮%। এ সময়ে বাংলাদেশে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৭.৪২% এবং গড় মূল্যস্ফীতি ৬.২%। আমরা চেষ্টা করছি অর্থনীতির চাকা সচল রেখে দ্রব্যমূল্যের দাম সহনীয় রাখতে। সাধারণ মানুষের অসুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান সরকার দেশে ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ২ লাখ মেট্রিক টন। অবশিষ্ট ১৮ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল আমদানি করে ভোক্তা সাধারণের চাহিদা পুরণ করা হয়। তাই আমদানি নির্ভর এ ভোজ্যতেলের আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি পেলে দেশীয় বাজারেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। যুদ্ধ, বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও পণ্যের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হলে ঘাটতি দেখা দেয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ যেসব দেশ থেকে ভোজ্যতেল আমদানি করে থাকে সেই সব দেশে কোনো কারণে পণ্য আমদানিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে দেশীয় বাজারে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। আর এ কারণেই ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে থাকে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সাম্প্রতিককালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে পণ্য আমদানিতে সংকট তৈরি হয়েছে। তাই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি নির্ভর পণ্যের মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। একই কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ভোজ্যতেলের মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সরকারের গৃহীত কার্যক্রমের ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মুল্য স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে।

আপনার মতামত লিখুন :